বিশেষ সংবাদ
চুয়াডাঙ্গায় রস সংগ্রহে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত গাছিরা
পঞ্জিকা অনুযায়ী আরও এক মাস পর শীত শুরু। তবে পঞ্জিকার অপেক্ষায় তর সইছে না প্রকৃতির। গ্রাম-বাংলার মাঠে-ঘাটে শীতের আবহ শুরু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার গ্রামে গ্রামে গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার গ্রামে গ্রামে খেজুরগাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। আর কিছু দিন পর গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব শুরু হবে।
জমির আলী নামে একজন গাছি বলেন, খেজুর গাছ কাটা সহজ কাজ নয়। অনেক সময় গাছের ওপর থাকা অবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করাটাই কঠিন হয়ে যায়। তবে শীতের শুরুতে রস সংগ্রহ করে পরিবারের জন্য কিছু সঞ্চয় করতে পারলে সেই কষ্টটা সার্থক হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দীননাথপুর গ্রামের গাছি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গাছের ডালপালা পরিষ্কার ও চাঁছা-ছিঁলার কাজ হয়ে গেছে। বাপের পেশা এখনও ধরে রেখেছি। এবার ৮০টি খেজুর গাছ চাঁছা-ছিঁলার কাজ হয়েছে। তারপর গাছে গাছে ঘাট কেটে রাখা হবে। শীতের শিশির যত বাড়বে ঘাট দিয়ে রস গড়িয়ে পড়তে শুরু করবে।’
তিনি আরও জানান, তার জমির আইলে নিজস্ব গাছ রয়েছে ৪০টি। আরও ৪০টি গাছ তিনি বর্গা নিয়েছেন। এ মৌসুমে দাম ভালো থাকলে এসব গাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো গুড় বিক্রি করতে পারবেন।
চুয়াডাঙ্গার মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের গাছি খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা পেশাগত কারণে প্রায় প্রতি বছরই খেজুরগাছ মালিকদের কাছ থেকে চার মাসের জন্য বর্গা নিয়ে থাকি। গাছ ভেদে ২ কেজি করে খেজুরের গুড় এবং ২৫০ টাকা দিতে হয় মালিকদের। এবারও প্রায় ১০০টি খেজুর গাছের জন্য মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে না দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য এই পেশা ধরে রেখেছি। খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন: খরায় কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা; বাজারেও সংকট
৪ ঘণ্টা আগে
ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে গাজীপুর: গবেষণা
গত দুই দশকে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে গাজীপুর বাংলাদেশের পরিবেশগত অবক্ষয়ের উদাহরণে পরিণত হয়েছে। এ সময় এ এলাকার ৬০ শতাংশ বন উজাড় এবং ৫০ শতাংশ জলাধার দখল করে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
২০০০ সালের গাজীপুরের বনাঞ্চলের আয়োতন ছিল ৩৯ হাজার ৯৪৩ হেক্টর। ২০২৩ সালে তা কমে ১৬ হাজার ১৭৪ হেক্টরে নেমে এসেছে। অর্থাৎ তিন বছরে বনাঞ্চল কমেছে ৫৯.৫১ শতাংশ।
একই সময় জলাশয়ের আয়তন কমেছে ৫১.৪২ শতাংশ। ২০০০ সালে জলাশয় ছিল ১১ হাজার ৪৬২ হেক্টর। ২০২৩ সালে সেখান থেকে কমে ৫ হাজার ৫৬৮ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সহযোগিতায় রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে 'গাজীপুর জেলার পরিবেশগত অবস্থা: পরিণতি ও ভ্রমণ' শীর্ষক এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
মানদণ্ড অনুযায়ী ২০-২৫ শতাংশ বনাঞ্চল এবং ৭-১৪ শতাংশ জলাশয় রাখতে হবে। কিন্তু গাজীপুরে এখন মাত্র ৯.৪৯ শতাংশ বনভূমি এবং ৩.২৭ শতাংশ জলাশয় রয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজীপুরে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলে এসে বসবাস করছে। এ কারণে শহুরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১০.৫১ শতাংশ, যেখানে গ্রামীণ জনসংখ্যা ২.০৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
মূলত শিল্পভিত্তিক কর্মসংস্থানের কারণে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হয়েছে। এখন কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার ৬১.৫২ শতাংশ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত।
২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পাঞ্চলের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
শিল্প কারখানার এই বৃদ্ধি বন ও জলাশয় দখলের অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আরও পড়ুন: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচার বন্ধ করতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
২০০০ সালে জেলার জমির ২৩.৪৪ শতাংশ বনাঞ্চল, ৬.৭৩ শতাংশ জলাশয়, ৫০.২১ শতাংশ বসতি, ৫.২১ শতাংশ শিল্প এলাকা, ১০.২১ শতাংশ কৃষি এলাকা এবং ৩.১৯ শতাংশ খোলা জায়গা ছিল।
২০২৩ সালের মধ্যে, এসব পরিসংখ্যানে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন দেখা যায়। এ সময় বসতি এলাকা ৬৫.৮৩ শতাংশ এবং শিল্প অঞ্চলগুলো ৮.৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। এর বিপরীতে বনাঞ্চলের পরিমাণ কমেছে ৯.৪৯ শতাংশ, জলাশয় ৩.২৭ শতাংশ, কৃষি এলাকা ১১.৯২ শতাংশ এবং উন্মুক্ত স্থান ০.৭৭ শতাংশ।
গত দুই দশকে গাজীপুরে অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের কারণে প্রায় ২৩ হাজার ৭৬৯ একর বা ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ বনাঞ্চল বিলীন হয়ে গেছে।
গাজীপুরের বাস্তুতন্ত্র ও অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য নদ-নদী, খাল, জলাভূমি দূষণ ও দখলের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে।
গবেষণায় তুরাগ, লাবান্দা, টঙ্গী, মোগর ও চিলাই নদীসহ প্রধান জলাশয়গুলোতে ২৪৭টি প্রধান স্থান দখল এবং ১৬১টি সক্রিয় দূষণ পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে।
তুরাগ নদী মার্কাস বিল থেকে আসা শিল্পবর্জ্যের কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। আর লাবন্দা নদী প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ১৫টি পৌরসভার বর্জ্য লাইন এবং ৩৯টি দৃশ্যমান শিল্প বর্জ্য লাইনের কারণে বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
জবরদখলের কারণে মোগর খালেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। প্রাথমিকভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং মাটি ভরাটসহ ৩৪টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
তুরাগ নদীর তীরে অবৈধ ইটভাটার কারণে দূষণ ও দখল বেড়েছে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
এদিকে, কৃষিকাজ ও মাছ ধরার মতো ঐতিহ্যবাহী জীবিকা ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখোমুখি।
গবেষণায় গাজীপুরের পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় পৌর ও জাতীয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও অবক্ষয় রোধ করতে এবং জেলার প্রাকৃতিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের জন্য শক্তিশালী পরিবেশগত নীতি এবং তার কার্যকরী প্রয়োগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র ও পরিবেশ সুরক্ষায় নিরপেক্ষ-নির্ভীক সাংবাদিকতা অপরিহার্য: রিজওয়ানা হাসান
৪ ঘণ্টা আগে
ব্যাংকে তারল্য সংকট: টাকা উত্তোলনে ভোগান্তিতে ৬ ব্যাংকের গ্রাহক
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) সাভার শাখা থেকে রেমিট্যান্সের অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করেছিলেন ৭৩ বছর বয়সি সাদেকুর রহমান।
গত ২৪ অক্টোবর বাবা-মায়ের চিকিৎসাসহ সংসারের খরচের এক লাখ টাকা পাঠান সাদেকুরের ছেলে রইসউদ্দিন।
১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাদেকুর তিন কিস্তিতে ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হন।
মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সাদেকুর বলেন, সংসারের খরচ মেটাতে কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা তুলতে হবে। কিন্তু এসআইবিএল নগদ অর্থের তীব্র সংকটে থাকায় ব্যাংক কর্মকর্তারা কয়েক কিস্তিতে টাকা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংক পরিবর্তন করে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের উপায়
এমন অভিজ্ঞতা শুধু সাদেকুরের নয়, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত সংকটাপন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপিঋণের কারণে তাদের অনেক গ্রাহক জমা অর্থে পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঋণগ্রহীতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন এবং তহবিলের অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের ব্যবসা ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছে।
এসআইবিএলের সাভার শাখার কর্মকর্তা আবুল হোসেন (ছদ্মনাম) ইউএনবিকে বলেন, অনেক আমানতকারী তাদের পুরো ব্যালেন্স তুলে নিতে চাচ্ছেন। এ কারণে ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে এ ব্যাংক।
তিনি বলেন, এই শাখায় ৮৭ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। যদি এক-তৃতীয়াংশ আমানতকারীও স্বল্প সময়ের নোটিশে অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করেন, তবে তা যেকোনো ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী জমা করা অর্থ দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ঋণে বিনিয়োগ করা হয়।
আরও পড়ুন: বেক্সিমকো গ্রুপে রিসিভার হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডি
হোসেন আরও জানান, তারা আমানতকারীদের অল্প পরিমাণে নগদ অর্থ সরবরাহ করছেন এবং তাদের অর্থ কিস্তিতে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সম্প্রতি নগদ অর্থের প্রচলন কমলেও ঋণের কিস্তি নিয়মিত করে তা পুনরুদ্ধার করতে কাজ করছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তা পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায় ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবি), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা পেয়েছে।
তা সত্ত্বেও আমানতকারীরা এসব ব্যাংকের শাখা, প্রধান কার্যালয় ও এটিএম বুথে ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু অনেক সময় তারা প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলন করতে পারেন না।
ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়াও তারল্য সংকটে থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণকারী অংশীদারত্ব রয়েছে।
আরও পড়ুন: মূল্যস্ফীতি রোধে নীতি সুদহার ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এস আলম গ্রুপের নিয়েছে এবং এসব অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ফলে ঋণগুলো খেলাপি হয়ে যায়। এতে করে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ নগদ ঘাটতি রয়েছে।
এসআইবিএলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ ইউএনবিকে বলেন, নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে তাৎক্ষণিক তারল্য সমাধানের ব্যবস্থা করতে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা নিচ্ছে।
ব্যাংকটি গত দুই মাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণের কিস্তি ও আমানত সংগ্রহ করেছে। এটি এসআইবিএলের নগদ প্রবাহকে ত্বরান্বিত করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসআইবিএল বর্তমানে আমানতকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী নগদ চাহিদা পূরণ করছে। কিন্তু একাধিক গ্রাহক একসঙ্গে টাকা তোলার চেষ্টা করায় কিছু শাখায় সমস্যা হচ্ছে।
ফরানউল্লাহ আরও বলেন, 'এ সমস্যা সম্পর্কে সবাই সচেতন, তবে গ্রাহকরা যদি তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের বাইরে নগদ উত্তোলন অব্যাহত রাখেন তবে এটি দীর্ঘায়িত হবে। স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরলে আমানতকারীরা তাদের টাকা পাবেন ব্যাংক।’
আরও পড়ুন: মূল্যস্ফীতি কমাতে ৮ মাস লাগবে: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর
এফএসআইবির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তার পর স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে।
বোর্ড পুনর্গঠনের পর থেকে ব্যাংকটি সফলভাবে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে যথেষ্ট তহবিল পুনরুদ্ধার করেছে বলে জানান তিনি।
এফএসআইবির চেয়ারম্যান বলেন, এফএসআইবি গ্রাহকদের মৌলিক চাহিদা, জরুরি চিকিৎসা, জরুরি পরিস্থিতি এবং রেমিট্যান্স এনক্যাশমেন্ট পূরণের জন্য ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
পর্যায়ক্রমে বড় আমানতকারীদের ঋণ পরিশোধেও কাজ করছে ব্যাংকটি।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ইউএনবিকে বলেন, গ্রাহকদের অর্থ দিচ্ছে ব্যাংক, যদিও বড় অংকের উত্তোলন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে।
আরও পড়ুন: ৭ ব্যাংককে ৬৫৮৫ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
তিনি বলেন, এসব সমস্যা রাতারাতি তৈরি হয়নি, বেশ কয়েক বছর ধরে তৈরি হয়েছে।
আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে মিন্টু বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হবে।
১২ ঘণ্টা আগে
ফেনীতে বন্যার ৩ মাস: নিঃস্ব ১৭১৮ পরিবার এখনও কোনো সহায়তা পায়নি
ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় সব হারিয়ে ১ হাজার ৭১৮ পরিবার সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে গেছে। বন্যার প্রায় তিন মাস পরও তাদের কেউ কোনো সহযোগিতা পায়নি বলে জানা গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম বলেন, সরকারিভাবে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও ১২ লাখ টাকা পেয়েছি। সেটি ১৫০ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ইউএনডিপি, বিডিআরসিএস, আরআইসি, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, ওয়াইপিএসএসহ কিছু সামাজিক সংগঠন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সহযোগিতা করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০ আগস্টের বন্যায় ফেনীতে ১ হাজার ৭১৮টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ও ৬ হাজার ৯৪১ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৬৭৫টি, ফুলগাজী উপজেলায় ২৯৫টি, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ২৯৩টি, পরশুরাম উপজেলায় ৩৩৩টি, সোনাগাজীতে ৩৭টি, দাগনভুঞা উপজেলায় ৮৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়াও ফেনী সদর উপজেলায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২০৬টি, পরশুরামে ৩৩৩টি, ছাগলনাইয়ায় ৩১৩টি, দাগনভূঞায় আংশিক ৯৮২টি, সোনাগাজীতে ৭৪১টি ও ফুলগাজীতে ১৩৪৯টি ঘরবাড়ি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৫৭ পরিবারের প্রতিটি ৪ বান্ডিল করে ঢেউটিন ও নগদ সাড়ে ৬ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছে। ফুলগাজী উপজেলায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহযোগিতায় ১০০টি ঘর মেরামত করে দিয়েছে।
ইউএনডিপির আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৩,০০০ পরিবারকে ঘর মেরামতের জন্য মোট ১০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ কার্যক্রম চলমান।
এছাড়া বিডিআরসিএস, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, আরআইসি এবং ওয়াইপিএসএসহ অন্যান্য সংস্থাও উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে অনুদান দিয়েছে।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক খোকন মিয়ার বসতভিটাসহ সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে বন্যা। নিরুপায় হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেচ স্কিমের ছোট্ট একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকছেন তিনি।
খোকন মিয়া বলেন, ‘সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। এক বন্যা আমাকে পুরো নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। ছোট তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলাম। এক মাস হয়ে গেছে কোনো কামকর্ম নেই। কী করে ঘর তুলব মাথায় আসছে না। বন্যার তিন মাস হয়ে গেল, অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের পুনর্বাসনে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখিনি।
সোনাগাজীর চরচান্দিয়া গ্রামের আবু তাহের বলেন, পানির স্রোত সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে। জীবন নিয়ে কোনো রকমে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পেরেছি। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি এসে দেখি কিছুই অবশিষ্ট নেই। পরিবার নিয়ে এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে বসবাস করছি।
ফেনী সদর উপজেলার বিরিঞ্চি এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী শামসুন্নাহার। বন্যায় তার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। তিনি চারদিকে প্লাস্টিক ও উপরে ভাঙা টিন দিয়ে ঝুপড়ি তৈরি করে থাকেন।
তিনি বলেন, ঘরবাড়ি সব বন্যায় নিয়ে গেছে। নতুন ঘর করার সামর্থ্যও নেই। সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা পাই, তাহলে ঘর মেরামত করতে পারব। না হয় ভাঙা ঘরেই থাকতে হবে।
ফেনীর সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডেল টিন ও নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন পুনর্বাসনে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে তাদের কাজগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে। গৃহনির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কাজ শুরু করা হবে।
২০ ঘণ্টা আগে
স্বাস্থ্যব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে জনগণ, সরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত চাপ
স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ জনগণের জন্য এটি মেটানো খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একারণে অনেকেই খরচ কমাতে সরকারি হাসপাতালের উপর নির্ভর করেন।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার আর্থিক সক্ষমতা যাদের নেই, তারা স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালের মতো সরকারি হাসপাতালের দারস্থ হন।
এসব হাসপাতালে কম খরচে পরিষেবা দেওয়া হলেও, নানা কারণে এসব হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের অসন্তোষের পরিমাণই বেশি। আর্থিক চাপ সত্ত্বেও তারা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন: ঢামেকে দুর্ভোগের অপর নাম শৌচাগার, নেই নারী-প্রতিবন্ধীদের কোনো সুবিধা
সরকারি হাসপাতালে সম্পদের সীমাবদ্ধতা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান খান অকপটে বাড়তি রোগীর সংখ্যা এবং সীমিত সম্পদের কথা উল্লেখ করেন। জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার সমস্যার কথা খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেন তিনি।
ঢামেকের মতো সরকারি হাসপাতালগুলো যথেষ্ট চাপের মধ্যে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের সক্ষমতার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। অতিরিক্ত ভিড়, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় সম্পদের ঘাটতি রয়েছে।’
জনগণের একটি বড় অংশ এসব হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, ওয়ার্ডে রোগীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্তরের কর্মীরাও ব্যস্ততা থাকায় সেবার জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয়।
এসব কারণে রোগীদের উপর গভীরভাবে প্রভাব পড়ে।
ঢামেকে ভর্তি থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিলন হক বলেন, অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ‘আমার বেশ কয়েক ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা ছিল, তবে আমি সময়মতো ডাক্তারদের কাছে পাইনি।’
যেকোনো ধরনের সেবা পেতে দেরি তো হয়ই। এছাড়াও অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অপেশাদার আচরণের অভিযোগও করেন মিলন।
সঠিক যত্নের অভাব শেষ পর্যন্ত তিনি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। এ কারণে তার ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করা মিলনের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে অতিরিক্ত ব্যয় করে বেসরকারি হাসপাতালে চিৎিসা নিতে বাধ্য হন তিনি।
একই রকম পরিস্থিতি আরও অনেকের। ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের অভিভাবকরাও একইরকম কথা জানালেন।
সম্প্রতি এক দম্পতি তাদের দুই বছরের মেয়ে মাহিকে সেখানে নিয়ে যান। কিন্তু একটি বেডের ব্যবস্থা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মাহির বাবা বলেন, ‘আমি জানি না কতদিন আমরা এই খরচ বহন করতে পারব, তবে আমার সন্তানের স্বাস্থ্যই আমার কাছে প্রধান বিষয়।’
অত্যাবশ্যক চিকিৎসা সেবা এবং ব্যক্তিগত আর্থিক অবস্থার ব্যবধানের মধ্যে এমন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি অনেক পরিবারকে এমন সমস্যায় পড়তে হয়।
বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার আবেদন
বেসরকারি হাসপাতালগুলো ব্যয়বহুল হলেও, সেবার মানের কারণে আর্থিক সংকট মোকাবিলা করেও অনেকে এখানে আসতে বাধ্য হন। রোগীরা সাধারণত বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবা এবং সুবিধাগুলোর মানে সন্তুষ্ট হতে পারেন। যদিও এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হয়।
৫৮ বছর বয়সি এনামুল করিম সম্প্রতি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানকার পরিষেবার বিষয়ে তিনি ইতিবাচক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে তিনি যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন তার থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা ছিল।
এনামুল বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা অবিশ্বাস্যভাবে দক্ষ, কিন্তু রোগীর সংখ্যার কারণে আমরা প্রায়ই সরাসরি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হই। তাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত অনুশীলন রয়েছে এবং ব্যয়বহুল হলেও বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়াই ভালো।’
স্বাস্থ্যসেবায় ব্যক্তিগত ব্যয় বাড়ছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের রিপোর্টে উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছে: ২০২০ সালে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত খরচে স্বাস্থ্যব্যয় প্রায় ৬৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
ওষুধপত্রসহ নানা ধরনের চিকিৎসা সামগ্রীর কারণে উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যক্তিগত খরচ হচ্ছে। তারপরে ডায়াগনস্টিকস এবং অন্যান্য চিকিৎসা পরিষেবা রয়েছে।
সাধারণ অর্থনৈতিক মন্দা এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। অনেকের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর কারণে মানুষ আর্থিক নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর্থিক সমস্যার কারণে চিকিৎসা বিলম্বিত হলে স্বাস্থ্য সমস্যা আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসার খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে।
এছাড়াও, ‘ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যব্যয়’ শুধু চিকিৎসা খরচের ওপরই প্রভাব ফেলছে না। এর বাইরেও ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা হ্রাস, উপার্জন হারানো এবং যাতায়াত খরচ-ব্যক্তি ও পরিবার উভয়ের উপরই ভারী বোঝা হিসেবে প্রভাব ফেলে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি গবেষণা এই ব্যয়গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করেছে। যেমন-সরাসরি চিকিৎসা (স্বাস্থ্যসেবা সংস্থানগুলোর ব্যয়), সরাসরি চিকিৎসা বহির্ভূত (পরিবহন এবং যত্নশীল সহায়তার মতো ব্যয়) এবং পরোক্ষ (উত্পাদনশীলতা হারিয়ে যাওয়া)।
এসব ব্যয় সম্মিলিতভাবে বিশাল অর্থনৈতিক বোঝা তৈরি করে, এর প্রভাব পড়ে পরিবার ও বৃহত্তর সমাজে। বর্তমান ব্যবস্থার সত্যিকারের আর্থিক প্রভাব বোঝার জন্য চিকিৎসা বহির্ভূত ব্যয়সহ স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের ব্যাপক মূল্যায়ন অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: ওষুধ ঘাটতি-সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঢামেক হাসপাতালে
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় কাঠামোগত বৈষম্য
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর মধ্যে ৩,৯৭৬টি সরকারি হাসপাতাল এবং ৯৭৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে।
তবুও, পদ্ধতিগত অদক্ষতা এবং সম্পদের অভাবের কারণে জনসাধারণ সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এপিডেমিওলজিক্যাল ট্রেনিংয়ের (সিআইইটি) গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১৩ শতাংশ বাংলাদেশি সরকারি হাসপাতালে সেবা নিচ্ছেন। ২৭ শতাংশ বেসরকারি বা এনজিও সেবা ব্যবহার করে।
আশঙ্কাজনকভাবে, একটি বড় বা ৬০ শতাংশ প্রবেশযোগ্যতা ও সামর্থ্যের অভাবে অযোগ্য সেবাদানকারীদের কাছে যায়।
পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সৈয়দ সাদ আন্দালিবের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এসব হাসপাতাল যে অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হয় তা পরিষেবার মানকে প্রভাবিত করে।
সরকারি হাসপাতালগুলো সীমাবদ্ধ সরকারি বাজেটের অধীনে পরিচালিত হয়, অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে পরিচালনা করা হয়। তারা রোগীদের আকৃষ্ট করতে এবং ধরে রাখতে উচ্চমানের সেবাদানের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করে।
এই পরিস্থিতি বড় বৈষম্য তৈরি করে, যা অনেক মানুষকে ব্যয় সত্ত্বেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করে।
আরও পড়ুন: অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ঢামেক হাসপাতাল
স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারের জন্য আহ্বান
ঢামেক হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ্ধতিগত সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
গুণগত সেবাদানে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রয়োজন সম্পদের বণ্টনে কৌশলগত পরিবর্তন, রোগী ব্যবস্থাপনায় উন্নতি এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মী প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন।
নীতি নির্ধারকরা এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীরা প্রতিনিয়ত সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছেন। যাতে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে বৈষম্য দূর করা যায়, রোগীদের উপর আর্থিক চাপ কমানো যায় এবং সাশ্রয়ী, গুণগত সেবা প্রদান করা যায়।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যব্যয় মোকাবিলা এবং সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রচারের প্রচেষ্টা "হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি ২০১২-৩২"-এর লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এখানে এমন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, যেখানে আর্থিক সীমাবদ্ধতা মানসম্মত চিকিৎসার প্রাপ্তির যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
সঠিক সংস্কারের মাধ্যমে, বাংলাদেশ এই লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি করতে পারলে, দেশের নাগরিকদের জন্য সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি বাস্তবায়ন হবে।
আরও পড়ুন: ঢামেক ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগ পুরোদমে চালু
৩ দিন আগে
কপ-২৯: জলবায়ু সংলাপের অগ্রভাগে বাংলাদেশের তরুণ নেতারা
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) কপ২৯-এর জন্য বৈশ্বিক নেতারা জড়ো হওয়ার পাশাপাশি তরুণ নেতা, নীতিনির্ধারক এবং জলবায়ু সমর্থকদের মধ্যে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ একটি শক্তিশালী আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে।
কপ-২৯ পূর্ববর্তী 'ইয়ুথ অ্যাজ এজেন্ট অব চেঞ্জ' শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন এবং অন্যান্য টিম ইউরোপ সদস্যদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের প্রস্তাব দেওয়াসহ জলবায়ু নীতিতে জরুরি অগ্রগতির দাবি জানাবে।
জলবায়ু মোকাবিলায় বাংলাদেশের তারুণ্যের কণ্ঠস্বর
নিজ দেশ যে জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এবং সেগুলোর মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে জোরালোভাবে কপ-২৯ পূর্ববর্তী সংলাপে তুলে ধরেন বাংলাদেশের তরুণ নেতারা।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে থাকায় তরুণ নেতারা জলবায়ু অভিযোজন, অর্থায়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উত্তরণসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে মনোনিবেশ করেছেন।
গোলটেবিল বৈঠকে তরুণ প্রতিনিধিরা বেশ কিছু সুপারিশ করেন। এর মধ্যে আরও উচ্চাভিলাষী নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) বাড়ানো এবং টেকসই শক্তির জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরও পড়ুন: কপ২৯: আজারবাইজানের পথে প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশি তরুণ জলবায়ু কর্মী রিনা আহমেদ বলেন, 'আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে আমাদের সম্প্রদায়গুলো স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে, জাতীয় নীতি গঠনে আমাদের আহ্বানগুলো থাকবে এবং আমাদের জলবায়ু অভিযোজন পদক্ষেপগুলো সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তন: জরুরি সংকট
গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে উল্লেখ করে জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ রহমান বলেন, ‘২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম বছর।’
তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন শুধু উষ্ণায়ন নয়, বরং এটি খরাকে তীব্রতর করছে, বন্যা বাড়াচ্ছে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে এবং বিশ্বব্যাপী ঝড়কে আরও খারাপ করছে। বাংলাদেশের মতো দেশে এর প্রভাব আরও বেড়েছে ‘
অভিযোজন, প্রশমন এবং সমর্থন
গোলটেবিল বৈঠকে জলবায়ু কর্মকাণ্ডের জন্য দুটি প্রধান উপায়ের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে-
জলবায়ু অভিযোজন: জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সম্প্রদায়গুলোকে প্রস্তুত করা। বাংলাদেশের জন্য এর মধ্যে রয়েছে সমুদ্র প্রাচীরের মতো অবকাঠামো নির্মাণ এবং চরম আবহাওয়া সহনশীল কৃষি পদ্ধতির প্রসার ঘটানো।
জলবায়ু প্রশমন: নবায়ণযোগ্য জ্বালানি গ্রহণ, জ্বালানি দক্ষতা উন্নত করা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানোসহ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা।
অভিযোজন এবং প্রশমনের সমন্বয়ে একটি বিস্তৃত পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ বলে জোর দেন এই তরুণ নেতারা।
সুইডেনের জলবায়ু দূত মায়া সোভেনসন বলেন, 'জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আমাদের সমর্থন অবশ্যই এই মুহুর্তে জরুরিভিত্তিতে পূরণ করতে হবে। মারাত্মক জলবায়ুর প্রভাবের মুখোমুখি দেশগুলোর ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।’
ইউরোপ দলের ভূমিকা
আরেকটি মূল বিষয় আলোচনা হয়। আর তা হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম), যা ২০২৬ সালে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই উদ্যোগটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পদক্ষেপকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কম কঠোর জলবায়ু নীতিযুক্ত দেশগুলো থেকে আমদানিতে কার্বন মূল্য প্রয়োগ করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু উপদেষ্টা মার্গারেটা নিলসন বলেছেন, ‘সিবিএএম দেশগুলোকে তাদের নির্গমনের জন্য দায়বদ্ধ রাখতে এবং বিশ্ব বাজারে একটি সমান ক্ষেত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
আরও পড়ুন: কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
কপ২৯’র বাইরে
জলবায়ু আলোচনা অব্যাহত থাকায় সংস্থাগুলো নির্গমন কমানো এবং জলবায়ু-ইতিবাচক উদ্যোগ উভয়ই অনুসরণে উৎসাহিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ু-ইতিবাচক প্রচেষ্টার লক্ষ্য কেবল কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করা নয়, বরং বায়ুমণ্ডল থেকে অতিরিক্ত সিও২ অপসারণ করা।
বাংলাদেশসহ টেকসই নেতাদের জন্য জলবায়ু পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুব নেতাদের এসব উদ্যোগ স্থানীয় সম্প্রদায়কে একত্রিত করছে এবং আন্তর্জাতিক পদক্ষেপকে অনুপ্রাণিত করছে।
নির্গমন কমানো, অভিযোজন এবং সবুজ শক্তি রূপান্তরের জন্য ব্যাপক পরিষেবাগুলোর গুরুত্বকেও জোর দিয়ে আসছে পরিবেশগত পরীক্ষা এবং ছাড়পত্র প্রদানকারী একটি বৈশ্বিক সংস্থা এসজিএস। সংস্থার পরিষেবাগুলো জিএইচজি নির্গমন পরামর্শ থেকে শুরু করে কার্বন নিরপেক্ষতা যাচাইকরণ পর্যন্ত বিস্তৃত। বেসরকারি এবং সরকারি উভয় খাতের নেতৃত্বকে সমর্থন করে।
তরুণদের নেতৃত্বে বৈশ্বিক আন্দোলন
কপ২৯ গোলটেবিল বৈঠকে জোর দিয়ে বলা হয়, জলবায়ু কর্মকাণ্ডে তরুণদের সম্পৃক্ততা নিছক প্রতীকী নয়। বরং এটি একটি প্রাণোচ্ছল এবং টেকসই ভবিষ্যত অর্জনের জন্য অপরিহার্য। টিম ইউরোপের সহযোগিতায় বাংলাদেশি তরুণ জলবায়ু নেতারা কার্যকর কৌশল এবং জবাবদিহিতার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাদের বার্তা পরিষ্কার: রূপান্তরমূলক পদক্ষেপের এখনই সময়।
বাকুতে কপ২৯ সম্মেলন যখন শুরু হচ্ছে, তখন এটা স্পষ্ট যে, আজকের তরুণরা কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নয়, বরং পরিবর্তনের কঠোর সমর্থকও। বিশ্ব সম্প্রদায় শুনছে, এবং এটি এই প্রজন্মের প্রতিশ্রুতি এবং প্রচেষ্টা যা অবশেষে জলবায়ু পরিবর্তনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: কপ-২৯ সম্মেলনের আগে জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে যুববন্ধন
৪ দিন আগে
ঢামেকে দুর্ভোগের অপর নাম শৌচাগার, নেই নারী-প্রতিবন্ধীদের কোনো সুবিধা
দেশের হাসপাতালগুলোতে অপরিচ্ছন্নতা, খাবারের নিম্নমান, অতিরিক্ত ভিড় এবং পরিবেশ এত অস্বাস্থ্যকর, যে রোগীরা সেখানে যেতে দুইবার চিন্তা করেন।
এসব সমস্যার জন্য সবচেয়ে বেশি অনিয়মে অভিযুক্ত হাসপাতালের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসিএইচ)।
মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণী তাহসিন ফারজানা বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে যাওয়ার কথা আমি কখনোই ভাবি না, ঢাকা মেডিকেল কলেজ তো দূরের কথা।’
তাহসিনের মতে, হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্বস্তিতে রাখা উচিত, তবে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা অত্যন্ত হতাশাজনক।
এসব হাসপাতালের শৌচাগারগুলো সবচেয়ে নোংরা স্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনরাও কিছুক্ষণ পরেই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন।
তাহসিন বলেন, ‘এই অবস্থা আর সহ্য করা যায় না। হাসপাতাল এমন একটি স্থান হওয়া উচিত যেখানে রোগী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে এটি আশা করা যেন একটি স্বপ্ন মাত্র।’
আরও পড়ুন: ওষুধ ঘাটতি-সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঢামেক হাসপাতালে
পরিচ্ছন্নতার মারাত্মক অভাব
হাসপাতালের ওয়ার্ড বা অপারেশন থিয়েটারই শুধু নয়, অপেক্ষমান কক্ষ, টয়লেট ও ক্যাফেটেরিয়ার মতো অন্য লোকজনের চলাচলের জায়গাগুলোও পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার অভাবে স্বাস্থ্যসেবা-সম্পর্কিত সংক্রমণ (এইচএআই), এমআরএসএ’র মতো ওষুধ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়াতে ভূমিকা রাখে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
সাদারণ জীবানুনাশকের সঙ্গে হাইপোক্লোরাইট জীবাণুনাশক নিয়মিত ব্যবহার করলে সি. ডিফিসিল সংক্রমণ কমানো যায়। এটি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তবে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে পরিচ্ছন্নতার বিষয় আশঙ্কাজনকভাবে নিম্নমানের।
ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফের সাম্প্রতিক জেএমপি রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মাত্র ৩৮ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি সেবা রয়েছে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালে (৩২ শতাংশ ) ও বেসরকারি হাসপাতালে (৬৯ শতাংশ) এর পার্থক্য লক্ষণীয়।
আইসিডিডিআরবির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের মাত্র ৩৩ শতাংশ শৌচাগার পরিষ্কার। এছাড়া অধিকাংশ শৌচাগারে মাসিক-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সামগ্রী ফেলার ব্যবস্থা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য সুবিধা নেই।
ঢাকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ২,৪৫৯টি শৌচাগার নিয়ে করা এই গবেষণায় দেখা গেছে, এখানে ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুযায়ী শৌচাগারের সংখ্যা অপ্রতুল। যেখানে জাতীয় মান অনুযায়ী ১:৬, সেখানে সরকারি হাসপাতালে এই অনুপাত পৌঁছেছে ২১৪:১।
আরও পড়ুন: অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ঢামেক হাসপাতাল
অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ঢামেক
দেশের অন্যতম প্রধান সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাপক চাপে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
ঢামেকে রোগীর সংখ্যা হাসপাতালের নির্ধারিত ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ কারণে সেবার গুণমান মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। আসন সংকট ও পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাবে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে করিডোর পর্যন্ত মেঝেতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান খান এসব সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, অতিরিক্ত ভিড় ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে চিকিৎসা সেবার অবনতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘একটি শৌচাগার ব্যবহার করতে হয় ১০ জন রোগীকে। ২,৬০০ জনের জন্য তৈরি স্থাপনায় ৪,৩০০ রোগী থাকে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে দুই-তিনজন সহকারীও থাকে। এর ফলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা কম থাকে।’
তিনি ব্যবহারকারীদের আচরণ সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘আমরা পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করি, কিন্তু অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন নন। টয়লেটে স্যানিটারি প্যাড ও প্লাস্টিক ব্যাগের মতো আবর্জনা ফেলেন। এসব কারণে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।’
কর্মী সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশেষত চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের অভাব, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বাধা সৃষ্টি করছে।
ঢাকার প্রধান হাসপাতালগুলোর স্যানিটেশন নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি, বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের গবেষকরা।
গবেষণায় বিশেষত বহির্বিভাগের সেবায় টয়লেটের কার্যকারিতা, পরিচ্ছন্নতা ও প্রবেশাধিকার নিয়ে গুরুতর সমস্যাগুলো উঠে এসেছে। সেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে স্যানিটেশন মান নিশ্চিত করতে উন্নত সম্পদ ও ব্যবস্থাপনার সুপারিশ করা হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো এই ক্রস-সেকশনাল গবেষণায় ১০টি সরকারি এবং দুটি বেসরকারি হাসপাতালের টয়লেটের কার্যকারিতা, পরিচ্ছন্নতা এবং ব্যবহারকারী ও টয়লেটের অনুপাত মূল্যায়ন করা হয়।
ফলাফল থেকে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালের মাত্র ৬৮ শতাংশ এবং বেসরকারি হাসপাতালের ৯২ শতাংশ টয়লেট কার্যকর ছিল। পরিচ্ছন্নতার অবস্থা আরও উদ্বেগজনক, যেখানে সরকারি হাসপাতালের মাত্র ৩৩ শতাংশ এবং বেসরকারি হাসপাতালের ৫৬ শতাংশ টয়লেট পরিচ্ছন্ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, বিশেষত বহির্বিভাগ সেবায় ব্যবহারকারী ও টয়লেটের অনুপাত খুবই অপ্রতুল। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ অনুপাত ছিল ২১৪:১ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছিল ৯৪:১।
বিশ্বাসযোগ্যভাবে, মাত্র ৩ শতাংশ টয়লেটের মধ্যে স্যানিটারি প্যাড ফেলার জন্য ডাস্টবিন ছিল এবং ১ শতাংশ এরও কম টয়লেট প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত ছিল।
ঢাকা শহরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে স্যানিটেশন সুবিধা উন্নত করা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) পূরণের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে জোর দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এসব সমস্যার সমাধানে হাসপাতাল প্রশাসকদের নেতৃত্ব, আরও সম্পদ এবং রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
এই গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রের মৌলিক স্যানিটেশন এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত নীতিগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
জরুরি সংস্কারের আহ্বান
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিস্থিতি দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার একটি বৃহত্তর সংকটের প্রতিফলন। ঢামেকের নিম্নমানের স্বাস্থ্যবিধি, কর্মী সংকট, বাজেটের অভাব এবং অপর্যাপ্ত সুবিধা জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ স্বাস্থ্যসেবার এক করুণ চিত্র উপস্থাপন করে।
এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ বরাদ্দ, নিবেদিত রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী এবং বিশেষভাবে, পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি ও রোগী সেবার মান বজায় রাখতে শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রয়োজন। রোগীর সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে। অথচ সংস্কারের বিষয়ে কখনো জোর দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: ঢামেক ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগ পুরোদমে চালু
৪ দিন আগে
১০ টাকায় দুপুরের খাবার!
কাঁচাবাজারে ঢুকলেই চোখ কপালে উঠছে, সঙ্গে মেজাজও বিগড়ে যাচ্ছে জনগণের। ক্রেতা-বিক্রেতার বচসা দাঁড়িয়েছে নিয়মিত ঘটনায়। কয়েক বছর ধরেই বাজারে মূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছে। এসব কথা চিন্তা করে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ব্যতিক্রমী আয়োজন রয়েছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া আদর্শ কলেজে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ‘টেন টাকা ফুড’ নামে ক্যান্টিন চালু করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ মোফাজ্জাল হোসেন।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত দইখাওয়া আদর্শ কলেজ। এখানকার অধিকাংশ রোক দ্রারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করেন। শিক্ষার্থীরা সকালে বের হওয়ার সময় অনেকেই বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতে পারেন না। তাই শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ‘টেন টাকা ফুড’ নামে এ ক্যান্টিন চালু করেন কলেজ অধ্যক্ষ মোফাজ্জাল হোসেন।
দুরমূল্যের বাজারে এ ক্যান্টিনে মাত্র ১০ টাকায় মিলে দুপুরের খাবার। এতে থাকে ডাল-সবজির খিঁচুড়ির সঙ্গে ডিম।
৫ বছর ধরে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দুপুরে ১০ টাকায় পেট ভরে খাবার খেতে পারেন। তবে কলেজ অধ্যক্ষের নিজস্ব টাকা আর বাইরের দুয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় চলে এ ১০ টাকার ফুড ক্যান্টিন। এই কলেজের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০০ জন।
দুপুরে ১০ টাকায় খাবার পেয়ে অনেক খুশি শিক্ষার্থীরা। ১০ টাকার ক্যান্টিন হওয়াতে অধ্যক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞাতাও প্রকাশ করছেন।
কলেজ শিক্ষার্থী মৃন্ময় সজল বলেন, ‘আমাদের কলেজ মানসম্মত ও সাশ্রয়ী একটি ক্যান্টিন রয়েছে। এর ফলে বাইরের কোনো খাবার খেতে হয় না। এজন্য আমাদের অধ্যক্ষ স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।’
সাইফুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টায় কলেজ গেটে প্রবেশের সময় ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট সংগ্রহ করেন তারা। দুপুর ১টায় ওই টিকিটের মাধ্যমে তারা ক্যান্টিনে খাবার খান।
আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার নিয়ে বিরোধ, গুলিবিদ্ধ ২
৫ দিন আগে
ওষুধ ঘাটতি-সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঢামেক হাসপাতালে
ওষুধ সংকটসহ ‘ব্যাপক’ অনিয়ম রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ফলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত রোগীরা প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
অধিকাংশ সময়ই হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকে। ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
বিভিন্ন বিভাগের প্রতিবেদনে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে: অস্বচ্ছ পরিবেশ, নিম্নমানের খাবার, জনবলের ঘাটতি এবং অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে হাসপাতালের করিডোর ও মেঝেতে রোগীর ভিড়।
রোগীদের অভিযোগ দিন দিন বেড়ে চলেছে বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান খান।
আরও পড়ুন: অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ঢামেক হাসপাতাল
তিনি বলেন, 'আমরা এসব সমস্যা সম্পর্কে জানি এবং এগুলো সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
তবে,বর্তমানে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ওষুধের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি অন্যতম বড় সমস্যা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে নানা অসুবিধার মুখে পড়তে হয়।
তিনি বলেন, 'অধিকাংশ প্রয়োজনীয় ওষুধই এখানে পাওয়া যায় না। বাইরের ফার্মেসি থেকে বেশি দামে এগুলো কেনা ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না।’
হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে বলা হয় ওষুধ নেই, অথচ বাইরের ফার্মেসিগুলোতে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে। একারণে ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দেয়।
গ্রাম থেকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা এক নারীকে দেখা যায় পাশের একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে যেতে। তার সঙ্গে আরেক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তার আত্মীয় নন।
তবে ওই ব্যক্তির পরিচয় বা রোগীদের ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কমিশন পাচ্ছেন কি না-জানতে চাইলে তিনি দ্রুত উত্তর এড়িয়ে যান।
ওষুধের ঘাটতির বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান খান বলেন,সরবরাহের ঘাটতির কারণে সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না করলে আমরা কী করতে পারি? অনেক আইটেম আমাদের দরকার, অথচ সরবরাহ করা হচ্ছে না।’
এছাড়া কিছু সংখ্যক রোগী অভিযোগ করেছেন, তারা কয়েক দিন ধরে মাত্র এক ধরনের ওষুধ পাচ্ছেন। রোগীদের প্রায়ই বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এ কারণে রোগীদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি হচ্ছে।
ওষুধ ঘাটতির প্রধান কারণ হিসেবে বাজেট ঘাটতির কথা উল্লেখ করেন একজন হাসপাতাল কর্মী।
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে আমরা ওষুধ পাচ্ছি না। বাজেটের ঘাটতির কারণে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ সবসময় সম্ভব হয় না। সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে বাজেট বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে হবে।’
তবে, বর্তমান বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
আরও পড়ুন: ঢামেক ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগ পুরোদমে চালু
সিন্ডিকেট ও ঘুষের অভিযোগ
হাসপাতালের অভ্যন্তরে ঘুষ ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। একারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে উঠেছে।
হাসপাতালের কর্মচারী ও ওয়ার্ড সহকারীরা হুইলচেয়ার সরবরাহ এবং বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এই ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ রোগীদের খরচ বাড়িয়ে তুলছে।
হাসপাতালে দেখা গেল, এক রোগীকে সহযোগিতা করছিলেন এক একজন অনিবন্ধিত কর্মী। এই সহযোগিতার জন্য তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কাউকে জোর করি না আমাদের টাকা দিতে, কিন্তু যদি তারা দেয়, তাহলে তা আমাদের সহায়ক হয়।’
এই ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা স্বীকার করেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান খান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
পরিচালক বলেন, ‘দুই পক্ষই এ সমস্যার জন্য দায়ী। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা কয়েকজনকে বরখাস্ত করেছি এবং এমন কার্যকলাপ বন্ধে কাজ করছি। যদিও সম্পূর্ণ নির্মূল এখনো সম্ভব হয়নি।’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, স্বাস্থ্যখাতে সিন্ডিকেটের ব্যাপক প্রভাব নিয়ে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
এসব সিন্ডিকেটকে "জীবন নিয়ে ছিনিমিনি" বলেও আখ্যা দেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে মেয়াদ উত্তীর্ণ (পাওয়ার তারিখ শেষ) ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করে মুনাফা অর্জনের অভিযোগ তোলেন।
এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে এবং গরিব রোগীদের এই ধরনের শোষণমূলক কার্যকলাপ থেকে রক্ষা করতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের সংকট
বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ওষুধের সরবরাহ দীর্ঘদিন ধরে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
২০২০ সালে একটি জরিপে জানা যায় যে ৭২ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে ওষুধের ঘাটতি নিয়মিত। এটি রোগীদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের বাধা তৈরি করছে।
ওষুধের ঘাটতির জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। এর মধ্যে বাজেট বরাদ্দের অপ্রতুলতা, সীমিত স্বাস্থ্য বিমা এবং বহিরাগত রোগীর সংখ্যা অত্যধিক হওয়া।
জনস্বাস্থ্য খাতে গত ১২ বছরে দেশের জিডিপির ১ শতাংশের এরও কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে অপ্রতুল। স্বাস্থ্যবিমা না থাকার কারণে অধিকাংশ রোগী নিজ খরচে চিকিৎসা করতে বাধ্য হন। এ কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ বাড়ায়।
এ ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করেছে, যার মধ্যে ছিল কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ভ্যাকসিন, সিরিঞ্জ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
তাছাড়া, সরকার জনস্বাস্থ্য খাতকে ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দেয়, তবে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এই ভর্তুকি প্রায়ই অপ্রতুল।
২০১৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসা সরবরাহ ব্যবস্থায় আরও কিছু সমস্যার কথা উঠে আসে।
গবেষণাটি হাসপাতাল শপের কর্মীদের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছিল। এতে দেখা যায়, অর্ধেকেরও বেশি ওষুধ ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয় এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওষুধ সরাসরি কেনা ও দান হিসেবে আসে।
তবে, হাসপাতালের ফার্মেসিতে সঠিক সংরক্ষণের সুবিধার অভাব রয়েছে। সেখানে কোনো এয়ার কন্ডিশনিং বা রেফ্রিজারেশন সুবিধা নেই।
ব্যবস্থা গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, স্টোরেজ সুবিধা এবং প্রশিক্ষণ উন্নত করার আহ্বান জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ভবিষ্যতের দৃষ্টি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিস্থিতি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগজনক চিত্র উপস্থাপন করে।
যদিও পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে, রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আরও ব্যাপক সংস্কার, বাড়তি তহবিল এবং স্বচ্ছতার জন্য আহ্বান জানান। তাহলে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা তাদের।
আরও পড়ুন: ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
৫ দিন আগে
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ডিএসই
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেঞ্চমার্ক সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আগাম শেয়ার নিষ্পত্তি, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে তারল্য সহায়তা এবং সম্ভাব্য মূলধন লাভের কর কমানোসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কারণে বাজারের এই ইতিবাচক মনোভাব দেখা দিয়েছে।’
বিনিয়োগকারীদেরও সচেতনভাবে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখা গেছে। তারা হয় পূর্ববর্তী বিনিয়োগ থেকে মুনাফা সুরক্ষিত করেছে বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উপার্জনের প্রতিবেদনসহ স্টকগুলোতে মূলধন পুনরায় বিনিয়োগ করেছে। এই নির্বাচনমূলক পদ্ধতি আশার সঞ্চার করায় সামগ্রিক বাজারের গতিতে অবদান রেখেছে।
আরও পড়ুন: বিক্রির চাপ বেশি সত্ত্বেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন ডিএসইতে
ডিএসইতে ৫৬৫ কোটি টাকার লেনদেন, বেড়েছে ২৫৭ কোম্পানির শেয়ার দর
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৬ দশমিক ৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় বাজার লেনদেন ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৬০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা হয়েছে।
আগের পাঁচ সপ্তাহে ৬১৬ পয়েন্ট হারানোর পর টানা দুই সপ্তাহে ২০২ পয়েন্ট যোগ করেছে ডিএসইএক্স।
ডিএসইর খাতভিত্তিক সূচকগুলোকেও বেশ ভালো করতে দেখা গেছে। ৩০টি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ ইনডেক্স ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে লেনদেন শেষ করেছে। একইভাবে শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ডিএসইএস সূচক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়।
বাজার কার্যকলাপের একটি প্রধান সূচক বাজার লেনদেন এই সপ্তাহে ৩ হাজার ২৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের ২ হাজার ৮৩ কোটি টাকার লেনদেনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এতে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৬০৬ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের গড় ৪১৬ কোটি টাকার তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন: ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ডিএসইতে ৫৫৬ কোটি টাকার লেনদেন
ডিএসইতে ঊর্ধ্বমুখী সূচকে লেনদেন, দর বেড়েছে ৩৭৩ কোম্পানির
৬ দিন আগে